• ঢাকা
  • রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

আজ গেছি, প্রয়োজনে আরো শতবার যাব : তামিম ইকবাল


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০১:১০ পিএম
আজ গেছি, প্রয়োজনে আরো শতবার যাব : তামিম ইকবাল

ক্রিকেট সমাজে ঢি ঢি পড়ে গেছে। তাওহিদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে গত কদিনে যা ঘটেছে, তা অভাবিত এবং হাস্যকরও। সবশেষ এপিসোডে যুক্ত হয়েছেন তামিম ইকবাল। শুক্রবার সদলবলে বিসিবির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।সভাশেষে জানা গেছে শাস্তির বাকি ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা আগামী মৌসুমে কাটাবেন মোহামেডান অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়। এই ঘটনায় দুটি ধারণা চাউর হয়েছে ক্রিকেটাঙ্গনে-

 

১। তামিমের দাপটে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত বদলেছে। 

২।ক্রিকেটারদের দলভারি করে বিসিবির নির্বচনী শোডাউন করেছেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। শুক্রবার রাতে তামিমের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন সাইদুজ্জামান।

 

প্রশ্ন : সবাই বলছে বিসিবির নির্বাচনের আগে একটা শোডাউন করলেন। শোনা যাচ্ছে আপনি প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট!

তামিম ইকবাল : কি বলেন এসব! প্রথমত আমি নির্বাচন করব কিনা, সেটাই তো ঠিক করিনি।আর যদি নির্বাচন করি, তাহলে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা দেন-দরবার করব। যাদের সঙ্গে গেছি, তারা তো ভোটার না!

 

প্রশ্ন : ভোটের বাজারে এবার মোহামেডান বড় প্লেয়ার। আপনি সে দলের খেলোয়াড়। কেউ যদি বলে, সেই সূত্রে আপনি প্রতিবাদ করছেন?

তামিম : যদি তাই হতো, তাহলে আমি তো তাওহিদের শাস্তি ঘোষণার পরই প্রতিবাদ করতাম। তা তো করিনি।আমিও মাঠে তর্ক করে শাস্তি পেয়েছি। তাওহিদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।  সিম্পল। ছোট দলের স্বল্প পরিচিত ক্রিকেটারের জন্যও আওয়াজ তুলতাম। যারা আমাকে চেনেন, তারা জানেন।

 

প্রশ্ন : তাহলে আজ কেন বলছেন যে তাওহিদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে? 

তামিম : অবশ্যই অন্যায় হয়েছে। ওর প্রথমে এক ম্যাচ সাসপেনশন হয়েছিল। দ্যাটস ফাইন। কিন্তু এরপর ৭ ডিমেরিট পয়েন্টটা একটু বেশি হয়েছে। তারপরও আম্পায়ার, ম্যাচ অফিয়ালদের সিদ্ধান্ত আমাদের মানতে হবে।

প্রশ্ন : তাওহিদের সঙ্গে অন্যায়টা কি হয়েছে, তা কিন্তু বলেননি।

তামিম : ওহ, অন্যায়টা হয়েছে আপনারা চিঠি দিয়ে ওকে খেলার অনুমতি দিলেন। আবার চাপে পড়ে সেই সিদ্ধান্ত পাল্টালেন। এভাবে তো হয় না। ক্রিকেটাররা ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। এখন এদের যদি আপনি তুচ্ছ মনে করেন তাহলে ক্রিকেট তো শেষ!

প্রশ্ন : তাওহিদ নিজেও তো আইসিসির একজন এলিট আম্পায়ারকে হেয় করেছেন?

তামিম : আমি স্বীকার করছি যে, কথা বলার সময় তাওহিদকে আরো স্মার্ট হতে হতো। কিন্তু আপনি কি ওই প্রশ্নটা শুনেছেন? তাওহিদকে বলা হয়েছিল, আইসিসির একজন এলিট আম্পায়ারের সঙ্গে আপনি এভাবে তর্কে জড়ালেন কেন? এর উত্তরে তাওহিদ ওই কথাটা বলেছে যে সে-ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। এভাবে না বলে সে যদি বলত, মাঠে সবাই আম্পায়ার।  এখানে এলিট কিনা, তা ব্যাপার না। আমরা যে কোনো আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য।  তারপরও আমরা মাাঝমধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখাই, শাস্তিও হয়। আবার আম্পায়াররাও আমাদের মতো মানুষ, তাই তাঁরাও ভুল করেন। কিন্তু ক্রিকেটে ডিসিপ্লিন বজায় রাখার জন্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। 

তামিম : অবশ্যই। নিষেধাজ্ঞা কে কিভাবে কমিয়েছে, প্রক্রিয়া ঠিক ছিল কিনা- এসব বোর্ডের ব্যাপার। তো শাস্তি কমেছে জেনে ম্যাচ খেলার পর এখন ওকে নিয়ে নতুন নাটক শুরু হয়েছে।  কেন?

প্রশ্ন : বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ, নাজমুল আবেদীন এবং ইফতেখার রহমান সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের এই প্রশ্নটা করেননি?

তামিম : অবশ্যই করেছি। কে ভুল করেছে, এটা তার আর বোর্ডের ব্যাপার। তাদের ভুলের জন্য একজন ক্রিকেটার সামাজিকভাবে হেয় হবেন কেন? আপনি অভিভাবক হয়ে তো এটা করতে পারেন না। উনারা সেই ভুল শিকার করেছেন।

প্রশ্ন : বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের ওপর খুব ক্ষুব্ধ মনে হলো আপনাকে? 

তামিম : অবশ্যই ক্ষুব্ধ। ক্রিকেট জুয়ার আমি কট্টর বিরোধী। তারপরও কোনো কিছু প্রমাণের আগে সেসব মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া কিংবা নিজের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা কোন ধরনের তদন্ত? আপনার সন্দেহ হয়েছে, ভালো কথা। তদন্ত করুন। প্রমাণ হলে শাস্তি দিন। কিন্তু সেসবের আগেই আপনি খেলোয়াড়ের নাম-ছবি মিডিয়ায় দিচ্ছেন। দুজন ক্রিকেটারকে প্রকাশ্যে ট্রায়াল করছেন। ইজ ইট আ জোক! ওই ছেলেগুলোর এবং ওদের পরিবারের মনের অবস্থা ভাবুন তো একবার! আইসিসিও সন্দেহ করে, তদন্ত করে। কিন্তু সেসব আপনি জানতে পারবেন তখনই যখন কোনো ক্রিকেটারের বিপক্ষে দোষ প্রমাণিত হয়। আর আমরা আগেই জনসমক্ষে ট্রায়াল করছি। কিন্তু দোষীকে তো ধরা পড়তে দেখি না। আমি আবারও বলছি, ক্রিকেট জুয়ার আমি ঘোর বিরোধী, এটা সবাই জানে। কিন্তু আগে প্রমাণ করুন। ঢালাওভাবে কাউকে হেয় করবেন না, ক্রিকেটকে ‘জোক’ বানাবেন না।

প্রশ্ন : আর কি নিয়ে আলাপ হলো?

তামিম : ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটারদের বেতন নিয়ে কথা বলেছি। এই যুগে একজন ক্রিকেটারের বেতন ২৫ হাজার টাকা। এটা ঠিক না। বোর্ড সভাপতিও তাই মনে করেন। এটা বদলাবে।
প্রশ্ন : সবশেষে, এভাবে দলবেঁধে গিয়ে আলোচনায় কি লাভ হলো? ২০১৯ বিশ্বকাপের পর আপনাদের বিদ্রোহের পরও কার্যত পরিস্থিতি বদলায়নি।

তামিম : আমরা তো বিদ্রোহ করিনি। আপনারা (মিডিয়া) হয়তো জানতেন না তবে আমি আগের রাতেই বিসিবি সভাপতিকে বলেছি যে, শুক্রবারে আপনার সঙ্গে আমরা বসতে চাই। আগে জানিয়েছি এ কারণে যে তিনি যেন আবার বিদ্রোহ ভেবে চমকে না যান। আর সুফল পাব কি পাব না, সেটা সময়ই বলবে। সেটা না পেলে আবার আলোচনায় বসব।

আর আপনি বললেন না যে আমি শোডাউন করতে গেছি কিনা! না, অবশ্যই না। অনেকদিন খেলেছি। এক্সপোজারও পেয়েছি যথেষ্ট। আর সেসবের দরকার নাই। আসলে গেছি, নিজের দায়বোধ থেকে। এত বছর ক্রিকেট খেলেও যদি ক্রিকেটের জন্য কিছু বলতে না পারি, তাহলে এতদিন কি ক্রিকেট খেললাম! সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে আমার মর্যাদাই-বা থাকল কোথায়? সেই দায়িত্ববোধ থেকে আজ (শুক্রবার) গেছি, প্রয়োজনে আরো শতবার যাব। এখানে আমার অন্য কোনো অভিলাষ নেই।


Side banner
Link copied!