• ঢাকা
  • রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১

ঈদযাত্রায় সড়কে প্রাণ গেল ৩২২ জনের


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৫, ০১:১৮ পিএম
ঈদযাত্রায় সড়কে প্রাণ গেল ৩২২ জনের
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির লোগো। ছবি : সংগৃহীত

ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ। সবাই আবার কর্মস্থলে ফিরেছেন। প্রত্যেকবারের মতো এবারও ঈদযাত্রায় সড়কে রক্ত ঝরেছে। ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৩২২ জন মানুষের। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮২৬ জন।

বুধবার (০৯ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব তথ্য জানান।

সমিতি আরও জানায়, এবারের ঈদযাত্রায় রেলপথে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত, ৮ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ৪টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত, ১ জন আহত হয়েছেন ও ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৩৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৫২ নিহত ও ৮৩৫ জন আহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, গত ২৪ মার্চ থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত ও ৮২৬ জন আহত হয়েছেন।

এই হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১৩৯৮ জন আহত হয়েছিলেন। বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আহত ৪০ দশমিক ৪১ শতাংশ কমেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের ঈদে ১৩৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জন নিহত ও ১৫৫ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, নিহতের ৪৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আহতের ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ প্রায়।

এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৭০ চালক, ৪৭ পরিবহন শ্রমিক, ৫০ পথচারী, ৬০ নারী, ৪০ শিশু, ৩৩ শিক্ষার্থী, ২০ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৬ শিক্ষক, ৪ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং একজন সাংবাদিক রয়েছেন।

সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের মধ্যে ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল, ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাস, ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কার ও মাইক্রো, ৭ দশমিক ২১ শতাংশ নছিমন-করিমন এবং ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

দুর্ঘটনার মধ্যে ২৭ দশমিক ৩০ শতাংশ ছিল মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে সংঘর্ষ, শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ দুর্ঘটনা অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে ঘটেছে।

এসব দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে। তবে এবার দীর্ঘ ছুটির কারণে ধাপে ধাপে বাড়ি ফেরার সুযোগ হওয়ায় ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে সংগঠনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায়, সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, হাইওয়ে পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ছিল যাত্রীবান্ধব ও দৃশ্যমান। উল্লেখ্য, যাত্রীসাধারণ অসংগঠিত ও সচেতন না হওয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে পৌঁছেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ

দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা অবাধে চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; সড়কে মিডিয়ামে রোড ডিভাইডার না থাকা, অন্ধবাঁকে গাছপালায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন এবং বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।


Side banner
Link copied!