• ঢাকা
  • শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা কার কেমন


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা কার কেমন

দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। এই দুটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ-ভারতের বিভাজনের পর থেকেই একাধিক যুদ্ধ ও সীমান্ত দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উভয় দেশই তাদের সামরিক কাঠামোকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু দুটি দেশের ক্ষমতা ও কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে স্পষ্ট পার্থক্য।সামরিক বাজেট ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ
সামরিক শক্তির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হলো প্রতিরক্ষা বাজেট। এই ক্ষেত্রে ভারত পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে। ভারতের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট বর্তমানে প্রায় ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। এর ফলে ভারত আধুনিক অস্ত্র কেনা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বেশি বিনিয়োগ করতে পারছে।অন্যদিকে পাকিস্তানের বাজেট তুলনামূলকভাবে কম, যা প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। তবে জিডিপির অনুপাতে পাকিস্তান ভারত থেকে বেশি বরাদ্দ দেয়। সীমিত বাজেটের মধ্যেও পাকিস্তান কৌশলগত ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যয় করে থাকে, বিশেষ করে চীন ও তুরস্কের সহায়তায় প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং যৌথ অস্ত্র উন্নয়নে।সেনাবাহিনীর কাঠামো ও ক্ষমতা
ভারতের স্থলসেনা সদস্যসংখ্যায় ও সরঞ্জামে অনেক বড়।ভারতের সক্রিয় সেনাবাহিনী প্রায় ১৪.৫ লাখ সদস্য নিয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাহিনী। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাতে ৪,২০১টি ট্যাংক আছে। গাড়ি আছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪টি। সেলফ-প্রপেলড আর্টিলারির সংখ্যা হলো ১০০। আর ২৬৪টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএসআরএস) আছে।অন্যদিকে পাকিস্তানের স্থলসেনা সদস্যসংখ্যা প্রায় ৬.৫ লাখ, যা ভারতের তুলনায় অনেকটাই কম। পাকিস্তানের ট্যাংকের সংখ্যা ২,৬২৭টি। ১৭ হাজার ৫১৬টি গাড়ি আছে। সেলফ-প্রপেলড আর্টিলারি আছে ৬৬২টি। মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমের (এমএসআরএস) সংখ্যা ৬০০।

বিমানবাহিনী ও আকাশ প্রতিরক্ষা
ভারতীয় বিমানবাহিনীর মোট এয়ারক্রাফটের সংখ্যা ২,২২৯টি। যুদ্ধবিমান আছে ৫১৩টি। হেলিকপ্টার আছে ৮৯৯টি। এ ছাড়া অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৮০টি। ভারত তার বিমানবাহিনীকে চতুর্থ প্রজন্ম ও পঞ্চম প্রজন্মের মধ্যে রূপান্তর করছে এবং ভবিষ্যতে এএমসিএ (অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট) চালুর পরিকল্পনা করছে। 

পাকিস্তান বিমানবাহিনী তুলনামূলকভাবে ছোট, কিন্তু প্রভাবশালী। পাকিস্তানের হাতে মোট ১,৩৯৯টি এয়ারক্রাফট আছে। যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ৩২৮ এবং হেলিকপ্টার আছে ৩৭৩টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা হলো ৫৭।

নৌবাহিনীর পরিকাঠামো
ভারতের নৌবাহিনী দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাতে ২৯৩টি ‘অ্যাসেট’ আছে। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সংখ্যা দুটি। ডেস্ট্রয়ার আছে ১৩টি। ১৪টি ফ্রিগেট আছে। সাবমেরিন আছে ১৮টি। এ ছাড়া প্যাট্রোলিং ভেসেলের সংখ্যা ১৩৫টি। 

পাকিস্তানের নৌবাহিনী তুলনামূলকভাবে ছোট। দেশটির ‘অ্যাসেট’-এর সংখ্যা ১২১টি। তবে একটিও এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এবং ডেস্ট্রয়ার নেই। ৯টি ফ্রিগেট, আটটি সাবমেরিন এবং ৬৯টি প্যাট্রোলিং ভেসেল আছে ইসলামাবাদের হাতে। এ ছাড়া পাকিস্তান চীনের সঙ্গে যৌথভাবে সাবমেরিন নির্মাণ এবং নতুন যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করছে।

পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি
উভয় দেশের কাছেই রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। ভারতের নীতি হলো ‘নো ফার্স্ট ইউজ’— অর্থাৎ সে প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগ করবে না। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি যথেষ্ট উন্নত, যেমন অগ্নি সিরিজ, পৃথিবী এবং ব্রাহ্মোস (যা রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত)।

পাকিস্তান ‘ফার্স্ট ইউজ’ নীতিতে বিশ্বাস করে, অর্থাৎ প্রয়োজন হলে পারমাণবিক অস্ত্র আগেই প্রয়োগ করতে পারে। পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি যেমন শাহিন, গৌরি এবং নাসর – মূলত ভারতের বিরুদ্ধে কার্যকর করার জন্যই পরিকল্পিত। তাদের ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী অপেক্ষাকৃত বেশি কৌশলগত, দ্রুত মোতায়েনযোগ্য এবং নির্ভুল।

প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও গবেষণা
ভারতের নিজস্ব প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও অত্যন্ত সক্রিয়, যা তেজাস যুদ্ধবিমান, অর্জুন ট্যাংক, আকাশ মিসাইল ইত্যাদি তৈরি করেছে। আইএসআরও এর মাধ্যমে ভারত নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সক্ষমতা অর্জন করেছে, যা নজরদারি ও যোগাযোগে বিরাট ভূমিকা রাখে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়ন তুলনামূলকভাবে সীমিত, তবে চীনের সহায়তায় অনেক উন্নয়ন সাধন করেছে। জেএফ-১৭ ও আল-খালিদ ট্যাংক পাকিস্তানের সামরিক উদ্ভাবনের অন্যতম উদাহরণ। তবে পাকিস্তান এখনো অনেকাংশে বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল।

কৌশলগত মিত্রতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে কোয়াড জোটের মাধ্যমে ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধান প্রতিরক্ষা মিত্র চীন। এ ছাড়া কিছু মধ্যপ্রাচ্যের দেশ এবং তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করছে। পাকিস্তানের জন্য চীনের সঙ্গে সিপিইসি প্রকল্প কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।তবে ভারত ও পাকিস্তান—দুটি দেশই ভিন্ন ভিন্ন শক্তি ও কৌশল নিয়ে তাদের সামরিক অবস্থান তৈরি করেছে। ভারত সামগ্রিকভাবে বড় বাজেট, অধিক সেনাশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং বিস্তৃত নৌ-আধিপত্যের মাধ্যমে এগিয়ে। অপরদিকে, পাকিস্তান সীমিত সম্পদে কার্যকর প্রতিরক্ষা কৌশল ও পারমাণবিক সক্ষমতার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।


Side banner
Link copied!