• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ইজ্জত লুট


FavIcon
এ এম এম নাসির উদ্দিন, সাবেক সচিব
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২০, ১২:০৮ পিএম
ইজ্জত লুট

‘লুট’ বাংলাদেশে এখন বহুল আলোচিত শব্দ। শেয়ার বাজার লুট, ব্যাংক লুট, বাংলাদেশ ব্যাংক এর রিজার্ভ লুট, ত্রাণ সামগ্রী লুট, সরকারি প্রকল্পের অর্থ লুট, দেশের সম্পদ লুট ইত্যাদি নানা কিছিমের লুটের সাথে দেশবাসী অত্যন্ত পরিচিত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জাতের লুট চলছে আপন গতিতে। হালে ব্যাপকভাবে বেড়েছে মা বোনের ইজ্জত লুট। সিলেট এবং নোয়াখালীতে অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ইজ্জত লুটের(গণধর্ষণ) বর্বরোচিত মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের হৃদয়ে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। প্রতিনিয়তই দেশের কোথাও না কোথাও ইজ্জত লুটের সংবাদ মিডিয়ায় দেখছি। আমরা হরহামেশাই বলছি সন্ত্রাসী এবং ধর্ষকদের কোন দল নেই। বাস্তবে কি তাই? নির্দ্বিধায় বলা যায়, এরা আমাদের নষ্ট রাজনীতির ফসল।নষ্ট রাজনীতিই এদের বেপরোয়া করে তুলেছে। ক্ষমতার ছায়ায় এরা বেড়ে ওঠে।

২। আশার কথা, সিলেট নোয়াখালীর গণইজ্জত লুটের ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে। আমাদের ছাত্র, যুব সমাজ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। এমনকি, যে সমস্ত জ্ঞানপাপীরা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কৌশলে অন্যায় অবিচারের পক্ষ নেন তাদের অনেকেই টিভি টক শোতে সাম্প্রতিক গণধর্ষণের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। মুসলমানদের মধ্যে আমরা যারা শিক্ষিত দাবী করি, তাদের ব্যাপক অংশই নিম্ন স্তরের তৃতীয় শ্রেণির ঈমানদার। হাদীস শরীফে এসেছে,যারা শক্তি দিয়ে অন্যায় অবিচার এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাঁরা প্রথম স্তরের, যারা মৌখিকভাবে অন্যায় অবিচার মোকাবিলার চেষ্টা করে তারা দ্বিতীয় স্তরের এবং যারা এর কোনটাই না করে অন্যায় অবিচারকে অন্তরে ঘৃণা করে তারা তৃতীয় এবং নিম্নস্তরের ঈমানদার। বলতে দ্বিধা নেই, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা এই তৃতীয় স্তরের ঈমানদার।৩।আশির দশকে দেশে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে গেলে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচারসহ এসিড নিক্ষেপের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হয়। এতে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা অনেক কমে আসে। জানা গেছে, সরকার ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড এর বিধান করে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এর সাথে আরো কিছু বিষয় বিবেচনা জরুরি।
ক। সন্ত্রাস, ধর্ষণ ইত্যাদি মাদকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সন্ত্রাসীদের বেশীর ভাগই মাদকাসক্ত বা কোন না কোন ভাবে মাদক ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট। মাদক ব্যবসার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং মাদক সেবনের শাস্তি আরো কঠোর করা প্রয়োজন। মাদক নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সন্ত্রাস, ধর্ষণ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর হবে না।

খ। মামলায় নির্ভরযোগ্য এবং যথাযথ তদন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দেশ্য প্রণোদিত তদন্ত বা 'জজ মিয়া' মার্কা তদন্তের প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত কর্মকর্তাকে একই মামলার সহযোগী হিসেবে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

গ। কাউকে ফাসাঁনোর জন্যে মামলা করার প্রমাণ পাওয়া গেলে বাদীর কঠোর শাস্তির ব্যবস্হা থাকা দরকার। যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত কর্মকর্তাকেও বিচার এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ঙ।দ্রততম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

চ।সন্ত্রাসীদের লালন পালনকারী এবং এদের গড ফাদার দের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৩।শুধু আইন সংশোধন করে ধর্ষণ নিয়ন্ত্রন সম্ভব নয়। এর জন্যে প্রয়োজন কঠোর এবং অর্থবহ রাজনৈতিক অঙ্গীকার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মাস্তানদের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। হাতুড়ি বাহিনী, হেলমেট বাহিনী, হোন্ডা এবং গুন্ডা বাহিনী ইত্যাদি নানা জাতের বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ধর্ষণোত্তর ব্যবস্হা নয়, ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা হায়েনা বাহিনীগুলোকে কঠোর হস্তে দমন ও এদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে। পুলিশের ‘অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব’ মার্কা জবাব গ্রহণযোগ্য নয়। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস সাধারণ জনগণের থাকে না। পুলিশকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে নিরপেক্ষভাবে সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

 


Side banner
Link copied!