
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুধীজন ও শিক্ষার্থীরা শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরের দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার হল চত্ত্বরে এই কর্মসূচী পালন করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বরিশালের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং সুধীজনেরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তরা বলেন, মুহসিন উদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক, যিনি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের একজন। তাকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অব্যাহতি দেওয়া সম্পূর্ণ অনিয়ম ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের দোসরসহ নানা অভিযোগ তুলে তাকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে উপাচর্যের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলমনা রয়েছে।স্বৈরাচারের দোসর রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্র অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মনববন্ধনে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের (বিএম) সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন চৌধুরী, কবি আসমা চৌধুরী, কথা সাহিত্যিক ও গবেষক সাইফুল আহসান বুলবুল ও অধ্যাপিকা কামরুল আহসান বুলবুল উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন রাকিবুল ইসলমা রকি, রাকিন খান ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রেজা শরীফ।বিএম কলেজের শিক্ষক মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, একজন অধ্যাপককে এমনভাবে উপাচার্য একক সিদ্ধান্তে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে বাদ দিতে পারেন না। তাছাড়া অধ্যাপক মুহসিনকে অব্যহতি দিয়ে যে হীন চিঠি দেওয়া হয়েছে সেটি সত্যি অপমানজনক। কোনো শিক্ষককে অফিসিয়ালভাবে এমন চিঠি কেউ দিতে পারে? আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো যে মানুষটি জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তাকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি সাথে অতিদ্রুত অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে স্বপদে বহাল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিন খান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষককে অপমানিত করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে বাদ দিয়েছেন উপাচার্য।উপাচার্য স্বৈরাচারের দোসরদের নিয়ে বিভিন্ন অন্যায় অপরাধ করছেন তারই প্রতিবাদ করায় মুহসিন স্যারকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে সিন্ডিকেট থেকে।’
কবি সাইফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘একজন শিক্ষাবিদকে অন্যায়ভাবে যে অপমানিত করা হয়েছে আমরা এটাকে কোনভাবেই মেনে নিব না। তাকে দ্রæত সম্মানের সাথে স্বপদে বহাল করার দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেট সভা চলছিল। শিক্ষার্থীদের বাধার কারণে সভায় উপস্থিত অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন অংশ নিতেন পারেননি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন এবং উপাচার্য সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার প্রেক্ষিতে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের দোসরসহ নানা অভিযোগ তুলে তাকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্য তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন আরও জোরালো হচ্ছে দিন দিন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের দাবি মানা না হলে আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :