• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

মহাসমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৫, ০৩:২১ পিএম
মহাসমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের

ছয় দফা দাবি আদায় ও কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আগারগাঁওয়ের নতুন সড়ক এলাকায় ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে এ সমাবেশ করেন তারা।

দেড় ঘণ্টাব্যাপী মহাসমাবেশে শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা আগামীতে সারাদেশে সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, অনেকে আমাদের এ আন্দোলন নস্যাতের ষড়যন্ত্র করছেন। অনেকে আবার রাজনৈতিক ইন্ধন দিচ্ছেন। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন। আমরা কোনো ষড়যন্ত্র বা ফাঁদে পা দেবো না। কারিগরির শিক্ষার্থীর অতীতেও সফল আন্দোলন করে দেখিয়েছে, এ আন্দোলনও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সফল করে আমরা ক্লাসে ফিরবো।

পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, শিগগির সারাদেশের পলিটেকনিকে থাকা আমাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবো। আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে। তার আগেই আমাদের দাবি সরকার মেনে নেবে বলে বিশ্বাস করি। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

এর আগে রোববার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা ১১টার দিকে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে সমাবেশস্থলে যান।

সমাবেশে শিক্ষার্থীদের হাতে দাবি-দাওয়া সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তাতে লেখা, ‘মামা থেকে মাস্টার, মামা বাড়ির আবদার’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’ ইত্যাদি। তাছাড়া ‘আমি কে তুমি কে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার,’ ‘তেরোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’,‘দেশ গড়ার হাতিয়ার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার,’ ‘ এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও’সহ নানা স্লোগানেও মুখরিত হয়ে ওঠে সমাবেশ এলাকা।

মামা থেকে মাস্টার হলে মানবো কীভাবে?

মহাসমাবেশে আসা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা মামলা করে তাদের পক্ষে রায় এনেছেন। তারা এখন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর বা শিক্ষক হিসেবে যারা আমাদের হাতে-কলমে শেখান, তাদের পদে পদোন্নতি পাবেন। ল্যাব সহকারীদের আমরা মামা সম্বোধন করে ডাকি। এ ‘মামা’ থেকে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা এখন ‘শিক্ষক’ হবেন, সেটা আমরা মানতে পারছি না।

ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শায়লা খাতুন বলেন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা আমাদের ল্যাবে থাকেন, জিনিসপত্র এগিয়ে দিয়ে হেল্প করেন। তারা মূলত পিয়ন পদে আছেন। তারা যখন আমাদের শিক্ষক তথা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর হওয়ার দাবি করেন, সেটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। হঠাৎ করে তারা আমাদের মামা থেকে মাস্টার হতে চাইবেন, এটা আমরা মানবো কীভাবে?

ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দেওয়াটা ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবির মাহমুদ বলেন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে তারা চাকরি নিয়েছেন, অথচ তারা হুট করে রিট করে বসলেন যে তারা শিক্ষক হবেন। বিষয়টি সারাদেশের চার লাখ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা মানতে পারছেন না। সরকার অবিলম্বে এ মামলাকারীদের বরখাস্তসহ শাস্তির ব্যবস্থা না করলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে না।আবু সুফিয়ান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ হয় পিএসসির অধীনে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে। অথচ ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ নিয়ে এখন তারা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি চাচ্ছেন। বিষয়টি সাধারণ মানুষ অনেকে বুঝতে পারছেন না। যারা কারিগরির বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, তারা এটা ভালো বুঝবেন যে, কতবড় অনিয়ম হচ্ছে এখানে।

দাবির সঙ্গে মন্ত্রণালয় একমত, তবুও কিন্তু…

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম  বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছি। কিছু বিষয় আছে, তারা না জেনে দাবি করছেন। যেটা সত্য নয়; যেমন—আদালতের রায়ে কোথাও ৩০ শতাংশ কোটা ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য রাখা হয়নি। আর কিছু বিষয় আছে; যেটা এ মন্ত্রণালয়ের (শিক্ষা) কারিগরি বিভাগ একা পূরণ করতে পারবে না। এর সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের যোগসূত্র রয়েছে। ফলে আমাদের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের কোনো দাবির প্রতি দ্বিমত নেই।

৬ দফা দাবি আদায়ে কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করছেন সারাদেশের ৪ লাখেরও বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে তারা স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচি করেছেন। পরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেও দাবি আদায় না হওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন। এতে রাজধানীতে ব্যাপক যানজট শুরু হয়। একই দিনে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি করেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করেন। এতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আলোচনায় আসে।এদিকে, ১৭ এপ্রিল তারা সারাদেশে রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। পরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তাদের আশ্বাস দেওয়া হলে কর্মসূচি শিথিল করে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। তবে সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ধারাবাহিক কর্মসূচি করে আসছেন তারা।


Side banner
Link copied!