জাল স্বাক্ষরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হেডম্যানের (মৌজাপ্রধান) প্রতিবেদন দাখিল করাসহ রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির এক ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার আমতলী ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর। খোদ তার জন্মদাতা বাবা সুলতান আহমদ মাস্টারও ছেলে রাসেলের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সম্প্রতি আমতলী ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে কাবিখা, টিআর, কাবিটা, ভিজিএফ, এলজিএসপি, গুচ্ছগ্রামের রেশন, বয়স্ক, বিধবা, দুস্থ ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচির অর্থ আত্মসাৎ, জায়গা দখল এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অন্যায় অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ লিখিত আকারে উপজেলা প্রশাসন বরাবর দাখিল করেছেন এলাকাবাসী। সর্বশেষ তার বাবা সুলতান আহমদ মাস্টারও ছেলে রাসেলের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সুলতান আহমদ মাস্টার বলেন, বাবা হয়ে ছেলের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রশাসনের কাছে কখন অভিযোগ করে- যখন ছেলের অন্যায়, অবিচার, অনিয়ম-দুর্নীতির সীমা ছাড়িয়ে মারাত্মক জনস্বার্থ পরিপন্থীর রূপ নেয়। আমার ছেলে চেয়ারম্যান হওয়ায় একটা অমানুষে পরিণত হয়েছে। খারাপের মধ্যে সে পারে না এমন কোনো কাজ নেই। ফলে তার ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলারও সাহস করে না। ছেলে হয়ে আমার সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে রাসেল। সে সংশ্লিষ্ট পাবলাখালী মৌজার হেডম্যান সুবাস চাকমার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া প্রতিবেদন দেখিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে আমতলী হাইস্কুল সংলগ্ন শহীদ মিনারের জায়গাটি দখল করেছে। স্ক্যানিং করেই হেডম্যানের স্বাক্ষর জাল করেছে সে।
আমার ছেলে রাসেলের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করতে না পেরে আমি নিজেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ তদন্তে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অভিযোগ তদন্ত করে গেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা জয়েশ চাকমা বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশে সরেজমিন এলাকায় গিয়ে তদন্ত করেছি। রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে তার বাবার দাখিল করা সব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব জিতু মুঠোফোনে বলেন, আমতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে তার বাবা যেসব অভিযোগ দিয়েছেন, সেগুলোর সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুলোর অনেক অভিযোগ এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।
স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে পাবলাখালী মৌজার হেডম্যান সুবাস চাকমা বলেন, আমার পৈতৃক সূত্রে আমতলী বাজার সংলগ্ন ভিডিপি ক্লাবের পাশে কিছু জমি ছিল। সেটি অনেক আগে বিক্রি করেছি। কিন্তু সেই জায়গাটি ক্ষমতার দাপটে এবং আমার স্বাক্ষর স্ক্যানিং মেশিনে জাল করে হেডম্যান প্রতিবেদন দেখিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আবেদন দাখিল করে দখল করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল। এর আগেও তিনি আমার স্বাক্ষর জাল করে আমতলী বাজারের কাগজপত্র জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেছিলেন। রাসেল চেয়ারম্যানের জাল-জালিয়াতি, অনিয়ম আর দুর্নীতিতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।
অভিযোগ অস্বীকার করে আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, স্থানীয় একশ্রেণির অসাধু লোকজন আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা আমার বাবাকেও আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। আর আমার বাবাও স্বার্থের জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছে।
আপনার মতামত লিখুন :