শরীয়তপুর জেলার সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত ঠিকাদার মোল্লা এন্টারপ্রাইজের মালিক মজিবর মোল্লা। বিগত ১৭ বছরে সরকারি প্রকল্পগুলোর নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকল্পের টাকার একটি বড় অংশ ভাগাভাগি হয়েছে দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী এবং রাজনৈতিক নেতাদের সাথে। এর ফলে জনগণের জন্য উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া কাজগুলো হয়েছে নিম্নমানের।
দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তোলা সাম্রাজ্য:
মজিবর মোল্লার সম্পদ তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে তিনি গড়ে তুলেছেন দুইটি বিশাল বহুতল ভবন। তার নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি তার সম্পদের বেশিরভাগই দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। রাস্তা, ব্রিজ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
সরকারি প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ:
সম্প্রতি শরীয়তপুর সদর পালং হরিসভা থেকে নিরালা পর্যন্ত পৌরসভার রাস্তা নির্মাণে ব্যবহৃত পচা ইট ও নিম্নমানের খোয়ার কারণে রাস্তার স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা। নির্মাণস্থল থেকে সংগ্রহ করা ইট ও খোয়ার নমুনা পরীক্ষা করলে এগুলো মানহীন বলে প্রমাণিত হবে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “এ ধরনের রাস্তা দীর্ঘদিন টেকসই না হবার সম্ভাবনাই বেশি। আমরা আমাদের ট্যাক্সের টাকার যথাযথ ব্যবহার চাই।”
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি ঢাকার চেষ্টা:
বিগত ১৭ বছর ধরে মজিবর মোল্লা আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সাথে আঁতাত করে কাজ করেছেন। তাদের আশ্রয়ে থেকে নিজের দুর্নীতির পরিধি বাড়িয়েছেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার বাইরে থাকার আশঙ্কায় তিনি বিএনপির ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। রাজনৈতিক দল বদল করে নিজের অপরাধ আড়াল করার এই চেষ্টা সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
জমকালো জীবনযাপন ও স্থানীয়দের ক্ষোভ:
মজিবর মোল্লার পৈত্রিক বাড়ি সদর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে থাকলেও বর্তমানে তিনি ৫ নং ওয়ার্ডে নির্মিত বিলাসবহুল দোতলা ভবনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার বিপুল সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে একাধিক জমি, গাড়ি এবং নগদ অর্থ। এলাকাবাসী বলছেন, তার এই বিলাসবহুল জীবনযাপন জনগণের করের টাকায় গড়ে তোলা।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া: ‘দল বদলে আড়াল হয় না’:
একজন স্থানীয় প্রবীণ নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, “এ ধরনের ঠিকাদাররা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে জনগণের টাকা লুট করে। এখন বিএনপির ছায়ায় ঢুকে অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করছে। এদের মতো লোকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সুশীল সমাজের দাবি: আইনের আওতায় আনুন:
সুশীল সমাজ এবং শরীয়তপুরের সচেতন মহল জোর দাবি জানিয়েছেন, ঠিকাদার মজিবর মোল্লার মতো দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। তারা বলছেন, “যতদিন এসব দুর্নীতিবাজ ঠিকাদাররা ধরা পড়বে না, ততদিন শরীয়তপুরের উন্নয়ন থমকে থাকবে। এসব ব্যক্তির অপকর্ম জনগণের উন্নয়নের পথে বড় বাধা।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান:
স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। তারা বলছেন, “সরকারি প্রকল্পের কাজে এত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার দায়ে মজিবর মোল্লার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত হওয়া উচিত। তার সব অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানো উচিত।”
আপনার মতামত লিখুন :