ঢাকা শহরের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একজন মেহেদী হাসান মিশু। তিনি বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। এতদিন নিজ এলাকা ছেড়ে খিলক্ষেতে আত্মগোপনে থেকে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করে আসলেও বর্তমানে ক্ষমতার পালাবদলে মহাখালীতে ফিরে এসে থানা পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে প্রকাশ্যেই চালাচ্ছেন ইয়াবা ব্যবসা। এই ব্যবসায় যুক্ত করেছেন দলীয় কর্মীদেরকেও। শুধু ইয়াবা ব্যবসাই নয় চলছে লাগামহীনভাবে তার বেপরোয়া চাঁদাবাজি। মহাখালীতে তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। বিএনপির মিশু যেন এখন এক আতঙ্কের নাম! এদিকে অভিযোগ এসেছে, আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততা আছে এমন ব্যাক্তিদের মামলার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করছেন এই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা।
কথা রটেছে বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু এলাকায় হুংকার দিয়ে বেড়ান- 'গত ১৭ বছরে যেই টাকা খরচ করেছি তা তিন মাসের মধ্যে তুলব।'
মহাখালীর এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমতলীতে বন ভবনের পাশে বনানী থানা যুবলীগের ক্লাব গত ৫ আগষ্টের পর দখলে নেয় মিশু। ক্লাবটিকে নতুন করে সংস্কার করা হয়। নতুন রং, নতুন দরজা জানালা, নতুন ডেকোরেশন। যা এখন বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবক দল মিশুর অফিস। এই ক্লাব সংস্কারের নামে আশেপাশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়েছিল।
মহাখালী আমতলী এলাকার ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠা চা দোকান, খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসব দোকান থেকে এখন চাঁদা নেয় মিশু ও তার লোকেরা। যদিও বিএনপি'র নীতিনির্ধারকরা নেতাকর্মীদের বারবার চাঁদাবাজি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন।
জানা গেছে, এলাকায় আতঙ্ক বিরাজমান রাখতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা ছাড়াও মিশুকে সঙ্গ দেয় থানা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও। ৫ আগষ্টের পর থেকে মিশুর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চরম আকার ধারণ করে মহাখালীর অতীতের সব সন্ত্রাসীকেও নাকি হার মানিয়েছে। আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহেদী হাসান মিশু মহাখালীতে অধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিদিন একঝাঁক চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে বেড়ান।
এদিকে মহাখালীর বাসিন্দা জিহাদ সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড এর পরিচালক ব্যবসায়ী কাওসার আহমেদ বিজয় অভিযোগ করেন, 'গত ৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে তাকে আটকে রেখে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে পঞ্চাশ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে মেহেদী হাসান মিশু।'
অন্যদিকে তথ্য পাওয়া গেছে, মিশু ঢাকা শহরের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একজন। বর্তমানে এই ব্যবসায় তিনি বেপরোয়া। মহাখালীর ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এখন তার হাতে। তার বদৌলতে এখন মহাখালীর তরুণ প্রজন্মের হাতে হাতে এই মরন নেশা। মহাখালী, আমতলী, রসুলবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় অন্তত পঞ্চাশ জন সেলার দিয়ে তিনি ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এছাড়া অত্র এলাকার বড় বড় ইয়াবার ডিলাররা নাকি মিশুর সোর্সে ইয়াবা না নিলে এলাকায় টিকে থাকতে পারছেন না। মিশুর ছত্রছায়ায় থাকলে আর কোনো সমস্যা নেই।
এই যদি হয় অবস্থা! তাহলে আর পরিবর্তনের কোনো সুযোগ দেখছেন না সাধারণ মানুষ। দল বদলালে শুধু অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক বদলায়, অপরাধ বদলায় না। বরং বাড়ে। নতুন নিয়ন্ত্রকের এতো বছর না খাওয়ার খুদা বলে কথা।
সাধারণ মানুষ মনে করেন, মিশুর মতো নেতার কারনে বিএনপি'র ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। অন্যথায় আগামীতে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হতে পারে বিএনপি'র।
আপনার মতামত লিখুন :