পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের বিরুদ্ধে প্রকল্পের ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগসহ বিপুল পরিমাণ ওই অর্থ আত্মসাতের তথ্য তুলে ধরে গত ২০ জুন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ ইং অর্থ বছরে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করে ভূয়া বিল ভাউচার তৈরি করে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাত করেছেন কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ মনগড়াভাবে পরিচালনা করেন তিনি। ঠিকভাবে কৃষি উপকরণ বিতরণ করেন না। কৃষকের প্রশিক্ষণের নাস্তা, খাবার ও ভাতাদি ঠিকমতো প্রদান না করে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত করেছেন।
গত ২২ এপ্রিল আউশ প্রণোদনা কার্যক্রম না করে ১ মাস পর ২৩ মে কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করেন। নির্দিষ্ট সময় সার ও বীজ বিতরণ না করায় সরকারের এই প্রকল্প কৃষকের উপকারে আসেনি। এছাড়াও মৌসুমপেরিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন প্রণোদনা কার্যক্রম পরিচালনা করায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২৩-২০২৪ ইং অর্থ বছরে অনাবাদী পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙিনায় সবজি ও পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প থেকে ৩৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৩৫০ টাকা, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২৬ লক্ষ ৬১ হাজার ১১২ টাকা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোড়দারকরণ প্রকল্প থেকে ১০ লক্ষ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠী, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর কৃষক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ৪০লক্ষ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নতমানের ধান,গম ও পাটবীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প থেকে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ টাকা, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প থেকে ৯ লক্ষ ৩০ হাজার ৮০০ টাকা, রাজস্ব প্রকল্প থেকে ১৬ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খামার যান্ত্রিকীকরন প্রকল্প থেকে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারগ্রেনরশীপ অ্যান্ড রেডিয়েশন ইন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত ২৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ৩১৮ টাকা, ষ্টেকহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কমপিটিটিভনেশন প্রকল্প (এসএসিপি) থেকে ২৯ লক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা এবং বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকার কাজ না করে ভূয়া বিল ভাউচার তৈরি করে মোট ২ কোটি ৪ লক্ষ ১৫ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাত করেন কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস। প্রকল্প সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট সদস্যগণ কিছুই জানেন না।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, উল্লেখিত প্রকল্পের কোনো দৃশ্যমাণ কাজ বাউফল উপজেলায় নেই। কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকা আত্মসাত করায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কৃষক সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে না। কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের কারণে কৃষি সেক্টর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের উন্নয়ন আলোর মুখ দেখছে না।
অর্থআত্মসাতের বিষয়ে জানতে বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.বশির গাজী বলেন, আমার জানামতে উল্লেখিত প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি। অনিরুদ্ধ দাসের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অবহিত করে এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :