• ঢাকা
  • শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

পাপড় বিক্রি করে সংসার চলে হারুন-মজিদা দম্পতির


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০১:০১ এএম
পাপড় বিক্রি করে সংসার চলে হারুন-মজিদা দম্পতির

মাদারীপুর শহরের পাকদি এলাকায় বসবাস হারুন-অর-রশীদ (৬৫) ও মজিদা বেগম (৫০) দম্পতির। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেজো মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় মেয়েটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। একমাত্র ছেলে পড়াশোনা করছে নবম শ্রেণিতে। এ অবস্থায় পাপড় বিক্রি করেই চলছে সংসার। পাপড় বিক্রি করে মাসে যে আয় হয়, তা দিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হয় বলে জানালেন হারুন-মজিদা দম্পতি।

প্রতিদিন স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ময়দা, তেল, হলুদ, ডিমসহ বিভিন্ন মসলা দিয়ে পাপড় তৈরি করেন। পরে তা রোদে শুকানোর পর তেলে ভাজা হয়। এরপর সেগুলো নিয়ে হারুন-অর-রশীদ ছুটে চলেন গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন গলিতে। তবে কয়েক বছর ধরে বিকেলে মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকপাড়েই বেশি বিক্রি করেন পাপড়। সেই টাকায় চলে চার সদস্যের সংসারের যাবতীয় খরচ। এভাবেই চলছে ৩০টি বছর।স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ বছর আগে মাদারীপুর শহরের পাকদি এলাকার নাসির উদ্দিনের ছেলে হারুন-অর রশিদের সঙ্গে একই জেলার কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের সিরাজুল হকের মেয়ে মজিদা বেগমের বিয়ে হয়। ওই সময় হারুন মাত্র ১২০০ টাকা বেতনে মাদারীপুর জেলা শহরের ইটেরপুল এলাকার এআর হাওলাদার জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। হঠাৎ করে জুট মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন হারুন ও মজিদা দম্পতি। এরপর কোনো উপায় না পেয়ে ঢাকায় চলে যান তারা।

একপর্যায়ে সংসারের অভাব দূর করতে স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু করেন পাপড় বানিয়ে তা বিক্রির কাজ। সেই থেকেই ধীরে ধীরে পাপড়ই হয়ে ওঠে তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস। এই পাপড় বিক্রির টাকায় সংসার চালানোর পাশাপাশি ঢাকায় দুই মেয়েকে পড়াশোনাও করাতেন তারা। স্বপ্ন দেখেছিলেন ভালো চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে মেয়েরা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জ্বরের প্রভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন তাদের বড় মেয়ে মনিরা আক্তার (২৮)। এমনিতেই অভাবের সংসার, তার ওপর আবার মেয়ের এই অবস্থা। পরে জায়গা জমি বিক্রি করে ও ধারদেনা করে চিকিৎসা করালেও পুরোপুরি সুস্থ হননি মনিরা। এজন্য নিজ বাড়িতে ফিরে এসেন তারা।

অভাবের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ছোট মেয়ে সোনিয়া আক্তারকে বিয়ে দিয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে মনিরার নামে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তাতে চলে না তার চিকিৎসার খরচ। একমাত্র ছেলে আবু বক্করকে কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি দিতে পড়ালেখা করাচ্ছেন। সে এখন নবম শ্রেণির ছাত্র। পড়ে মাদারীপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা ও ছেলের পড়ালেখাসহ সব খরচই পাপড় বিক্রির টাকায় চালাতে হয়। এক পিস পাপড় ১০ টাকা করে বিক্রি হয়। তাতে মাসে তাদের ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হয়। সেই টাকায় পুরো সংসার চালাতে হয় তাদের।

মজিদা বেগম বলেন, ‘ ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করি। এখন আর পারি না। বয়স হয়েছে। দুইজনই বুড়া-বুড়ি হয়ে গেছি। বিভিন্ন কারণে লোন করতে হয়েছে। প্রতি সপ্তায় সপ্তায় কিস্তি দিয়ে শোধ করতে হয়। একদিক দিয়ে টাকা আনি আরেকদিক দিয়ে দেই। মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আসে। এ দিয়েই কষ্ট করে চলতে হয়।’

হারুন অর রশিদ বলেন, ‘পাপড় বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাই। আমি যতই অসুস্থ থাকি না কেন, পাপড় বিক্রি করতে যেতেই হয়। কারণ আমার এছাড়া তো আর কোনো আয় নেই। সংসারে কামাই করারও কেউ নেই। এই বয়সে ভারী কোনো কাজ করতে পারি না। তাই হালকার মধ্যে এই কাজটা করে খাই। প্রতিদিন বিকেলে মাদারীপুর লেকেরপাড়ে বিক্রি করি, বাসস্ট্যান্ডে বিক্রি করি। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরেও বিক্রি করি। মাঝে মাঝে বাড়ির পাশে ভাড়া নেওয়া ছোট একটি দোকান আছে, সেখানে বসেও বিক্রি করি। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকার মতো বেচাকেনা হয়।’এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফজাল হোসাইন বলেন, ওই পরিবারের ক্ষুদ্র ব্যবসায় মূলধনের প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। তারা যদি আগ্রহী থাকেন তাহলে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন খাত থেকে ঋণ কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। এভাবে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে আগ্রহী আছি।


Side banner
Link copied!