• ঢাকা
  • রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১

দুই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ডিসি অফিস ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ০৯:৪১ পিএম
দুই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ডিসি অফিস ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি
ছবি : নরসিংদীতে দুই স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর প্রতিবাদ।

নরসিংদীতে ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রভাবশালীদের প্রভাব কাটিয়ে থানায় মামলা হলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর রায়পুরা উপজেলার চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কাজী বাড়ির মোড়ে সর্বস্তরের জনগণ মানববন্ধন করে।

এ সময় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন প্লাকার্ড নিয়ে ছোট থেকে বড় সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হলে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করারও হুঁশিয়ারি দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ধর্ষক ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, সাইফুল মিয়া, রমজান, কাইয়ুম ও তার দুই সহযোগী এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। তারা বিভিন্ন অসামাজিক কাজসহ মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এতদিন তাদের দ্বারা অত্যাচারের পরও ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের এমন ঘৃণ্য কাজে এলাকাবাসীর ভয় কেটে গেছে। তারা এই অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। অনতিবিলম্বে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। তা না হলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে।

আলটিমেটাম দিয়ে বক্তারা আরও বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের আইনের আওতায় আনা না হলে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী একজনের বাবা বলেন, আমার মা মরা এতিম মেয়ে। সে এখনো বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করে। তাকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। আছিয়ার নির্যাতনের পর কঠোর আইন করা হয়েছে- তারপরও এই নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। আমি মৃত্যুর আগে শিশু মেয়ের এই নির্যাতনের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখে যেতে চাই।

চর আড়ালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম জাজু বলেন, যদি এই ইউনিয়নের শাসক ভালো হতো, তা হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত না। অতএব এ ইউনিয়নের শাসক কর্তা হলো বর্তমানে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। তারা দেশকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। বর্তমানে এ এলাকার ঘরে ঘরে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে, প্রয়োজন হলে আমরা চর আড়ালিয়াবাসী সরকারের বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে যাব, এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য।

তিনি আরও বলেন, যারা ধর্ষণ করেছে তাদের কোনো কাজ নেই, তাদের একটাই লক্ষ্য, কার বাড়ি থেকে লুট করে আনবে ও খাবে, সে অপেক্ষায় বসে থাকে সব সময়। তারা এলাকায় হিরোইন, ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করে ও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে এবং সুযোগ বুঝে ধর্ষণ করে। এবার ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে কেবল মাত্র স্কুলের দুই শিশু শিক্ষার্থী বলে। আমাদের এই এলাকার অনেক মহিলা তাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এসব নির্যাতিত মহিলারা ইজ্জতের ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি। এছাড়া অনেক প্রবাসীর স্ত্রী তাদের লালসার শিকার হয়েছে।

এ সময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের সমাজসেবক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আতাউর রহমান মিঠু, চরআড়ালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম জাজু, ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইউনুস আলী মেম্বার, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান সরকার, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নূর আলম কাজী, পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুসা, বিদ্যালয়ের সভাপতি হাবিবুর রহমান, জেলা ছাত্রনেতা সাব্বির ভূইয়াসহ এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।

উল্লেখ্য, সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল তিনটার দিকে দুই বান্ধবী চরআড়ালিয়া গ্রামের কাইয়ুম ও মুন্নার সঙ্গে ঘুরতে বের হয়। তারা সারা বিকেল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে বাঘাইকান্দী এলাকা থেকে নরসিংদী রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি ও খাওয়া-দাওয়া করে। পূর্ব থেকেই কাইয়ুম ও মুন্না তাদের বন্ধুদের পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থাকতে বলে। সে অনুযায়ী অন্য বন্ধুরা স্কুলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে অটোরিকশাযোগে তাদের নিয়ে পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে যায় কাইয়ুম ও মুন্না। সেখানে যাবার পর এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক স্কুলের পাশে জনৈক নিক্সন মেম্বারের বাড়ির ছাদে নিয়ে যায় ইসরাফিল, সাইখুল, রমজান ও কাইয়ুম এবং অপর ছাত্রীকে মুন্না, ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান নদীর পাড়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। এ সময় ধর্ষিতারা চিৎকার দিতে চাইলে ধর্ষণকারীরা ইট হাতে নিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে। পরে তারা নিজ বাড়ি ফিরে গেলে তাদের অবস্থা দেখে পরিবারের সদস্যরা ঘটনা জানতে চাইলে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবার রায়পুরা থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে পৃথক দুটি মামলা করে।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার নেই। তবে মামলা রুজু হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মেডিকেল টেস্টসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


Side banner
Link copied!