ভাতিজাকে সভাপতি বানিয়ে দুই মাসেই কলেজের প্রায় ৮ লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি বহুমুখী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. শামছুল আলমের বিরুদ্ধে। কলেজের চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে সভাপতি ও অধ্যক্ষের স্বাক্ষরিত চেকে বিনা ভাউচারে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এদিকে ভাতিজা ডা. মাহমুদুল হাসানকে সভাপতি করে এডহক কমিটি অনুমোদনের দুই মাস না যেতেই তা স্থগিত করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
বেলকুচি বহুমুখী মহিলা কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ শামছুল আলম দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বরখাস্ত ছিলেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি স্ব-পদে বহাল হন এবং আপন ভাতিজা ডা. মাহমুদুল হাসান শুভকে সভাপতি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিটির অনুমোদন করিয়ে আনেন। কমিটি অনুমোদনের দুই মাসের মধ্যেই কলেজের অনুকুলে চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করা হয়। এদিকে ৬ মাস মেয়াদি এডহক কমিটি ১ মাস ২৫ দিন যেতেই অজ্ঞাত কারণে গত ১২ নভেম্বর স্থগিত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক বলেন, কলেজের চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা ও জনতা ব্যাংকে অনার্স শিক্ষার্থীর বেতন, ভর্তি ফি, ফরম ফিলাপ ফি আদায়ের টাকা জমা হয়। আর সোনালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে একাদশ শ্রেণির অনলাইনে আদায় হওয়া ভর্তি, পরীক্ষা ও ফরম ফিলাপ ফি এবং অপর অ্যাকাউন্টে স্নাতক শিক্ষার্থীদের যাবতীয় আদায়ের টাকা জমা হয়। গত ৪ নভেম্বর অগ্রণী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্টের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আর ১৭ নভেম্বর জনতা ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির স্বাক্ষরিত চেক থেকে টাকাগুলো তোলা হয়েছে। মাস শেষে ব্যাংকের স্টেটমেন্ট আনতে গিয়ে হিসাব সহকারী টাকা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত হন।
তিনি বলেন, অধ্যক্ষ শামসুল আলম সাসপেনশনে ছিল। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালু ছিল। এরই মধ্যে দুটি তদন্ত হয়েছে। একটি অর্থনৈতিক, অপরটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তদন্ত। তৃতীয় দফায় তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সে তদন্তও চলছিল। এরই মধ্যে নিজে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে ভাতিজাকে সভাপতি করে নিয়ে আসেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চলছিল। স¤প্রতি কমিটি স্থগিতও করা হয়েছে। তবে কী কারণে কমিটি স্থগিত হয়েছে সে বিষয়ে জানা যায়নি।
হিসাবরক্ষক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, কলেজের চার অ্যাকাউন্টে প্রায় ১০ লাখ টাকা ছিল। সেখান থেকে ৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. শামসুল আলম বলেন, আমাকে ২৫ মাস বেতন দেয়নি সাবেক কমিটি। তাই ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৯ টাকা আমি আমার বেতন হিসেবে তুলে নিয়েছি। আর অনার্সের শিক্ষকরা ২ মাস ধরে বেতন পায় না। সে জন্য একটি রাউন্ড ফিগার উত্তোলন করা হয়েছে। ইউএনও কিছুদিন সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তখন তিনি কোনো বিলে স্বাক্ষর করেননি। কারণ নিয়োগে জটিলতা আছে। সার্টিফিকেট ছাড়াই চাকরি দেওয়ার অভিযোগ আছে। তাছাড়া বেতন বৈষম্যের অভিযোগও রয়েছে। তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর এমপিও বিল স্বাক্ষর করলেও নন-এমপিও একটি বিলও স্বাক্ষর করেননি। আমি দায়িত্ব পুনরায় ফিরে পেয়ে এবং ভাতিজা সভাপতি হওয়ার পর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বনি আমিনকে প্রধান করে ও চার শিক্ষক সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। এরা তদন্ত রিপোর্ট দিলে বিলগুলো ছাড় হবে।
এ বিষয়ে জানতে কলেজের সাবেক সভাপতি ডা. মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন :