বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে সাভারের মোঃ মাসুদ মিয়া। গত ৫ই আগষ্ট বিকেলে সাভার পৌরসভার মুক্তির মোড় এলাকায় তিনি গুলিবৃদ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা অবনতি হওয়ায় পরে তাকে সাভার এনাম মেডিকেলে ভর্তি করেন। দীর্ঘ প্রায় ২ মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর পঙ্গু অবস্থায় নিজ বাড়িতে চলে আসেন। চিকিৎসা চলাকালীন তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতাও পায়নি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মাসুদ মিয়া বর্তমানে স্ত্রী ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েকে নিয়ে পড়েছে অসহায় অবস্থায়। একদিকে চিকিৎসা ব্যয় অপর দিকে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানো প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়েছে। আদৌ তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন কি-না তা অনিশ্চিত। সহযোগিতা ছাড়া মাসুদ মিয়া পরিবার নিয়ে পথে বসার উপক্রম।
মোঃ মাসুদ মিয়া (৪৫), চাঁদপুর জেলার, হাইম চর থানার আলগী গ্রামের মৃত আলী হোসেন ছেলে। বর্তমানে তিনি সাভার থানাধীন, সাভার সদর ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড দেওগাঁও এলাকায় বসবাস করেন। তার স্ত্রী জেসমিনা মাসুদ একজন গৃহীনী। তাদের দুটি সন্তান। ছেলে আব্দুল কাইয়ুম মারুফ, যিনি পড়াশোনা করেন এসএসআর ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এন্ড ম্যানেজমেন্ট এর ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং 6th সেমিস্টার। মেয়ে সাভার বয়েজ এন্ড গার্লস স্কুল ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী।
একান্ত এক সাক্ষাৎরে আহত মাসুদ মিয়া বলেন, ৫ই আগষ্ট বিকেল ৪ টার দিকে আমি বাসা থেকে বের হই। তখন আমরা দেখি অসংখ্য উচ্ছুক জনতা সাভার স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছে। তখন আমিও ঐ দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি অসংখ্য আহত রোগী আশুলিয়ার দিক থেকে এনাম মেডিকেলে যাচ্ছে। সেই সুবাদে আমরা সে দিকে গেলাম। গিয়ে দেখলাম আমাদের এলাকারই একজন ভাই রাসেল "যিনি মারা গেছেন" উনাকে আহত অবস্থায় এনাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগ নিয়ে যাই। পরে আমি সাভার থানার দিকে যাওয়ার পথে মুক্তির মোড় থেকে অধর চন্দ্র স্কুলের কাছাকাছি গেলে দেখি সাভার থানা থেকে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালাচ্ছে। সে সময় সাধারণ মানুষ বিভিন্ন দিকে ছুঁটতে থাকে। আমিও এক দিকে দৌড় দেই। পিছন থেকে একটি গুলি এসে আমার কোমড়ে লেগে একদিক দিয়ে ডুকে অন্য দিক দিয়ে বের হয়। আমি মাটিতে পরে যাই। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে সরকার হাসপাতালে পরে এনাম মেডিকেলে ভর্তি করে। সেখানে প্রায় ২ মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর পঙ্গু অবস্থায় বাড়িতে চলে আসি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় খরচ কম হলেও বর্তমানে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক অসহায় অবস্থায় রয়েছি। সরকারের কাছে আমার পরিবারের প্রতি সুদৃষ্টি রাখার আহবান রইলো।
তার স্ত্রী জেসমিনা মাসুদ জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তার স্বামী গুলিবৃদ্ধ হওয়ার পর থেকে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আহত স্বামীর চিকিৎসা ব্যয়, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ, পরিবারের অন্য খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসা চলাকালীন তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতাও পায়নি। জমানো আর নিজের গহনা বিক্রির টাকা শেষ করে বর্তমানে ধারদেনার উপরে চলতে হচ্ছে তাদের। স্বামী সুস্থ্য স্বাভাবিক হয়ে পরিবারের হাল ধরবে তাও অনিশ্চিত। সরকার যদি তাদের পরিবারের প্রতি সুদৃষ্টি দেন সেই আহবান করেন তিনি। তার ছেলে
আব্দুল কাইয়ুম মারুফ বলেন, আমার বাবা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ই আগষ্ট পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। বাবার উপার্যনের উপর নির্ভর করে আমাদের পরিবারের সমস্ত খরচ। যেহেতু আমার বাবা গুলিবৃদ্ধ হয়ে বাড়িতে আছেন। তার কোন আয় নেই। বাড়িতে যা ছিল সব টাকা বাবার চিকিৎসার জন্য ব্যয় করা হয়েছে। সরকার যদি কোন ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমার আর আমার বোনের পড়াশোনা চালানো সম্ভব হবে। তা-নালে পড়াশোনা চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে আহবান করছি অতি দ্রুত একটি ব্যবস্থা করে দেন। যাতে আমার বাবার চিকিৎসা এবং আমার আর আমার বোনের পড়াশোনা চালাতে কোন সমস্যা না হয়।
আপনার মতামত লিখুন :