• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

অবৈধ বালু ব্যবসা হাতবদল হয়ে এখন রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির হাতে


FavIcon
জহুরুল ইসলাম:
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
অবৈধ বালু ব্যবসা হাতবদল হয়ে এখন রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির হাতে

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পর বালু ব্যবসায়ও হাতবদল হয়ে এখন রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির হাতে চলে গেছে।  রায়গঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ফুলজোড় নদী। আর ফুলজোড় নদীর অবৈধ বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক ধানগড়া ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হক ও  স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী কে এম ফাহিম ফয়সাল। 
দেড় দশক ধরে ফুলজোড় নদীর তলদেশ ক্ষতবিক্ষত করে বাল্কহেড দিয়ে উপজেলার চান্দাইকোনার সিমলা খন্দকারপাড়ায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শোভন সরকার এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এর মধ্যে গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রায়গঞ্জে ফুলজোড় নদী খননে প্রকল্প হাতে নেয়। খনন কাজের বালু তুলে নদীর দু’পাশে স্তূপ করে রাখা হয়। সঠিক সময়ে দরপত্র আহ্বান না করায় সেই বালু রাতের আঁধারে চুরি হচ্ছে। 

অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও তাঁর লোকজন ফুলজোড় নদীর দু’পাশ ঘিরে গড়ে উঠা বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান যৌথ বাহিনীকে নিয়ে গত (১১ অক্টোবর ২০২৪)  বৃহস্পতিবার চান্দাইকোনার খন্দকারপাড়ায় অভিযান চালান। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে আশাদুল ইসলাম, সুজন হোসেন, রুহুল শেখ, জাহিদুল ইসলাম, নাঈম সরকার ও জাকারিয়া হোসেনকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম সাজা দেন। সাজাপ্রাপ্তদের বাড়ি ফরিদপুর, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায়। এ সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় বগুড়ার ধুনটের রেফাজুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের বেলাল শেখকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ইউএনও  নাহিদ হাসান খানের দাবি, অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে প্রশাসন তৎপর। অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে  মামলা দেওয়া হয়েছে।  অনেককে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। এরপরও অনেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বালু তুলছে। খবর পেলেই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। 
তবে বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ধানগড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম।  তাঁর দাবি, ‘গত বছর দরপত্রের মাধ্যমে পাউবোর কাছ থেকে নদী খননের কার্যাদেশ পান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শোভন সরকার। তিনি পলাতক। তাঁর কাছ থেকে বিএনপির কিছু নেতা কাজটি কিনে নিয়েছেন। ফাহিম সেখান থেকে জোর করে বালু নিয়ে বিক্রি করছে। সে নিষেধ শুনে না। 
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা শোভন সরকার পলাতক থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  
তবে চেয়ারম্যানের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, নানা কারণে গত বছর ফুলজোড়  নদী খননের বালু বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এদিকে খননের বালু চুরি হচ্ছিল। এ কারণে  কামারখন্দ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুরে ৫০টি প্যাকেজে নিলামে বালু বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ২/১ সপ্তাহের মধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। 
চেয়ারম্যানের অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী কে এম ফাহিম ফয়সাল বলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল হকের  নেতৃত্বেই সিমলায় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। পাউবোর খনন করা বালুও রাতের আঁধারে তাঁর নেতৃত্বেই বিক্রি হচ্ছে সরেজমিন গেলে প্রমাণ মিলবে। 


Side banner
Link copied!