• ঢাকা
  • রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

বিতর্কিত শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করলেন ইউএনও, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা


FavIcon
জহুরুল ইসলাম:
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম
বিতর্কিত শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করলেন ইউএনও, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

আওয়ামীলীগ সরকারে আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ করা সহকারি প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসানোর অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে রায়গঞ্জের শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিমগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকমন্ডলী। কে এম ইউনুছ রবিন নামে ওই শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের দাবীতে প্রতিদিনই বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। ইউনুছ রবিন সোনাখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপেনের চাচাতো ভাই। আওয়ামীলীগ আমলে চেয়ারম্যান রিপন বিদ্যালয়টির সভাপতি ছিলেন। ক্ষমতার দাপটে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে চাচাতো ভাইকে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইউনুছ রবিনকে নিয়োগের প্রতিবাদে ৪দিন ধরে বিক্ষোভ করছে বিদ্যালয়ের হাজারও শিক্ষার্থী। বিক্ষোভের মুখে বিদ্যালয়ে আসতেও পারছেন না তিনি। সরেজমিনে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান পদত্যাগ করেন। এর আগে তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রায় পৌণে ৬ কোটি টাকা দূর্নীতির অভিযোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারিরা। তাঁর পদত্যাগের ১১ ঘণ্টা যেতে না যেতেই শিক্ষক বা অভিভাবকদের কোন মতামত না নিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর সহকারি প্রধান শিক্ষক কে এম ইউনুছ রবিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের সভাপতি নাহিদ হাসান খান। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) স্কুল খোলার সাথে সাথে ছাত্র-ছাত্ররা প্রধান ফটকের সামনে দাড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে গত চারদিনে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেন নি ইউনুছ রবিন। নিমগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিয়াম ও মো. নূর শ্রেণী, ৮ম শ্রেণীর সাথী ও প্রান্ত ৮ম শ্রেণী এবং ৭ম শ্রেণীর মাহিম ও আব্দুল্লাহসহ একবাধিক শিক্ষার্থী জানায়,আমরা ওই নিয়োগ বাতিলের দাবী জানাই। কারণ ইউনুছ রবিন স্যার সদ্য পদত্যাগী প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির সহযোগী। তাকে আমরা প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাই না। 


কথা হয়, রমজান আলী তালুকদার, নাসির উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন ও আবুল বাশারসহ বেশ কয়েকজন অভিভাকের সাথে। তারা বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্ষমতার দাপটে টাকার বিনিময়ে ইউনুছ রবিনকে অবৈধভাবে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তার নিয়োগ নিয়ে এলাকায় সমালোচনা থাকলেও ইউএনও মদোহয় সেই শিক্ষকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এটা আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। 


কথা হয় সহকারি শিক্ষক মো. জহুরুল হক, মো. শামীম হোসেন, মো. আব্দুল হাদী তালুকদার, শহিদুল ইসলাম ও মো. মাসুদ রানাসহ বেশ কয়েক শিক্ষক কর্মচারির সাথে। তারা বলেন, আমরা ২৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষক-কর্মচারি সভা ও রেজুলেশন করে ইউনুছ রবিনের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে এসেছি। ২৩ জন শিক্ষক-কর্মচারির মধ্যে ২১ জনই এতে স্বাক্ষর করেছে। আমাদের দাবী তাকে বাদ দিয়ে সিনিয়র যে কোন শিক্ষককে কাউকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হোক। তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করলেও এখন পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে পা রাখতে পারেননি। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানান তারা। 


স্থানীয় সূত্র জানা যায় , ২০২২ সালে তৎকালিন ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তাফা কামাল রিপন অবৈধভাবে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন। এ নিয়ে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে নাজমুল ইসলাম স্বপন নামে এক অভিভাবক পিটিশন দায়ের করেন। যদিও ক্ষমতার প্রভাবে জোরপূর্বক পিটিশনটি নিস্পত্তি করিয়ে বোর্ড থেকে কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়। ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল আব্দুল মান্নান নামে একজন অভিভাবক বাদী হয়ে আদালতে ওই কমিটিকে অবৈধ দাবী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা থাকার পরও ওই ম্যানেজিং কমিটি সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। 


আব্দুল মান্নান নিয়োগ অবৈধ দাবী করে মামলা দায়ের করলে আদালত ৫ মে নিয়োগের উপর স্থিতাদেশ দেন। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে ১ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষা, ২ জুলাই নিয়োগ ও ৩ জুলাই ইউনুছ রবিনকে তড়িঘড়ি করে চাকরীতে যোগদান করানো হয়। অভিযোগ রয়েছে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল হাদীর সাক্ষাতকার নেওয়া হয়নি। ওই নিয়োগে অর্ধকোটি টাকার বানিজ্য করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বাদী আব্দুল মান্নানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ জুলাই ওই নিয়োগে আদালত নিয়োগের উপর পূর্বের স্থিতাবস্থার আদেশ বহাল রাখেন। আদালতকে তোয়াক্কা না করেই তার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। 


এসব বিষয়ে কে এম ইউনুছ রবিন বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী ইউএনও সাহেব ডেকে নিয়ে আমাকে দায়িত্ব অর্পণ করেছে। দায়িত্ব পেয়ে স্কুলে গেলে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমি ইউএনও মহোদয়ের পরামর্শে আইনগত দিকে চলাফেরা করছি। এখনো আমাকে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। 


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. নাহিদ হাসান খান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক না থাকলে সহকারি প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পাল করবে। আমি না দিলেও নীতিমালা অনুযায়ী অটোমেটিক উনি দায়িত্ব পাবেন। ওনার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি আমরা তদন্ত করে দেখবো। এখন পরপর দুজনকে বরখাস্ত করা যাচ্ছে না। 


অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রোজিনা আক্তার বলেন, আইনগতভাবে প্রধান শিক্ষক না থাকলে সহকারি প্রধান শিক্ষককে স্বাভাবিকভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেটা কিন্তু নিয়োগ নয়। বিদ্যালয়ের রুটিন ওয়ার্কগুলো যেন চালানো যায়। অনাস্থা বিষয়টা জনপ্রতিনিধির জন্য প্রযোজ্য। চাকরীজীবিকে বাদ দিতে আইনগত কিছু প্রসেস আছে। প্রসেস মেইটেইন করেই তাকে বাদ দিতে হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখবো। 


Side banner
Link copied!