সিরাজগঞ্জে গভীর রাতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে আতংক সৃষ্টির পর অন্তত ১৫ বাড়ী ভাংচুর ও লুটপাট করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তুচ্ছ একটি ঘটনাকে পুঁজি করে পার্শ্ববর্তী একডালা মহল্লার একটি সংঘবদ্ধ চক্র স্বর্বস্ব লুটে নিয়ে হতদরিদ্র ওই পরিবারগুলোকে নি:স্ব করেছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার চক কোবদাসপাড়া মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। এতে ১৫টি পরিবারের প্রায় ৫০ লাখ টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা দাবী করেছেন। এ ঘটনার পর কোবদাসপাড়া মহল্লার বাসিন্দারা আতংকে রয়েছেন। আবারও হামলা ও লুটপাটের আতংকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে অনেককেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোবদাসপাড়ার ব্যবসায়ী হাসমত আলী, পাটের ছালা ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ, রতœা খাতুন, আব্দুর রাজ্জাক, রিকশাচালক আব্দুল গনি, বিধবা চাঁনবিবি, দিনমজুর জেহাদসহ অন্তত ১৫টি পরিবারের বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ভাংচুর করা হয়েছে। টিনের ঘর কুপিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলা হয়েছে। প্রতিটি ঘরের আলমিরা বা শোকেচ ভেঙে টাকা ও গয়না লুট করা হয়েছে। এছাড়াও ভেঙে ফেলা হয়েছে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাড়িঘর ভাংচুর ছাড়াও আব্দুস সামাদের ১৮শ পিস পাটের ছালা, খোকা শেখের একটি গরু আব্দুর রাজ্জাকের রিকশা লুট করা হয়েছে। একটি সমবায় সমিতির ঘরে ঢুকে টিভিসহ আসবাবপত্র ভাংচুর এবং সমিতির প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা লুট করেছে দুর্বত্তরা।
আব্দুস সামাদ, শামছু, আব্দুর রাজ্জাক, চাঁন বিবিসহ ভুক্তভোগীরা ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, ঈদের আগের দিন থেকে একডালা ও কোবদাসপাড়া গ্রামবাসীর মধ্যে দ্ব›দ্ব ও সংঘর্ষ চলে আসছিল। কিন্তু আমাদের পাড়ার ছেলেপেলেরা কোন মারামারির সাথে জড়িত ছিল না। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টার দিকে একডালা মহল্লার রফিকের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন আমাদের পাড়ায় ঢুকে প্রথমে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে দরিদ্র ও খেঁটে খাওয়া সাধারণ গ্রামবাসী ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপরই বাড়িঘরে তান্ডব চালায় ফেলু, রফিক, আক্কাস, শরীফ, সাগর, অনিক, ফিরোজ শাহাদতসহ একডালা গ্রামের অন্তত ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী।
স্থানীয় অনির্বান জনকল্যাণ বহুমুখী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসমত আলী বলেন, ওরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক সৃষ্টি করে। এরপর ভয়ে যে যার মতো পালাতে থাকে। তখনই তারা তান্ডব শুরু করে। মানুষের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুট করার পাশাপাশি আমাদের রেজিষ্ট্রিকৃত সমিতির ঘরে ঢুকে টিভিসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং টেবিলের ড্রয়ারে থাকা সমিতি ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, মারামারি ওই এলাকার দুই মহল্লার ঐতিহ্যগত ব্যাপার। রাতে দুপক্ষের ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনার খবর পেয়ে দুই ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে বাড়িঘর ভাংচুর বা লুটপাটের বিষয়ে কোন তথ্য আমরা পাইনি। আমাদের কেউ কোন অভিযোগও দেয়নি। অভিযোগ দিলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :