• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

বরিশালে সন্তানকে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা


FavIcon
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৪, ০৮:১৮ পিএম
বরিশালে সন্তানকে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা

বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মেইন সড়ক এলাকার একটি বহুতল ভবনের চারতলার ফ্ল্যাট থেকে বাবা ও শিশুকন্যার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (১২ জুন) সকালে ভাড়া বাসা থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের স্বজনদের ধারণা, পারিবারিক কলহের জেরে মেয়েকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন ওই ব্যক্তি।
নিহতরা হলেন নাঈম হাওলাদার (৩৫) এবং তার শিশুকন্যা রাবেয়া বশরী রোজা (৫)। নিহত নাঈম উজিরপুরের বরাকোঠা এলাকার শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে। পেশায় তিনি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিনের গাড়িচালক ছিলেন।
নিহত রোজার দাদি নাসিমা বেগম ও ফুফু আঁখি আক্তার জানান, পারিবারিক কলহের জেরে চার মাস আগে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন নাঈম। কিন্তু মেয়ে রোজাকে তার কাছে নিয়ে আসেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় একাধিক মামলাও হয়েছে তাদের মধ্যে। এ কারণে নাঈম মানসিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েন। তার চিকিৎসাও চলছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১১ জুন) মোবাইল করে রোজার মা জানিয়েছেন, বুধবার বরিশালে এসে মেয়েকে তার কাছে নিয়ে যাবেন। এ খবর পাওয়ার পর থেকেই আরও ভেঙে পড়েন নাঈম। সে কোনোভাবেই তার মেয়েকে হাতছাড়া করতে চায়নি। তাদের ধারণা, সকালের যেকোনও সময় প্রথমে রোজাকে বঁটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে নাঈম। পরে একই বঁটিতে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন তিনিও। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বিষয়টি তাদের নজরে আসে।
নাঈমের বাবা শাহজাহান হাওলাদার জানান, ফ্ল্যাটের তিন কক্ষের প্রথম কক্ষে ঘুমাতেন তার স্ত্রী এবং মেয়ে। ভেতরের কক্ষে থাকতেন নাঈম, তার মেয়ে এবং তিনি নিজে। বুধবার সকালে ঘুম থেকে জেগে বাইরে যাওয়ার সময় নাঈম তার কাছ থেকে ২০ টাকা চেয়ে নেয়। এ সময় বাবা-মেয়েকে খাটে দেখতে পান তিনি। সকাল ৭টায় বের হওয়ার পর ৯টার দিকে তার মেয়ে নাসিমা মোবাইলে এ ঘটনা জানায়।

তার ধারণা, তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার পরই নাঈম এ ঘটনা ঘটিয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই মানসিক সমস্যা দেখা দেয় নাঈমের। তার মধ্যে রোজার মা খবর তার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এসব বিষয় নিয়েই হয়তো এ ঘটনা ঘটিয়েছে নাঈম।
তিনি আরও বলেন, ‘৬ বছর আগে নাঈম বিয়ে করে। গত এক বছর ধরে নাঈম ও তার স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। এ নিয়ে দুপক্ষ থেকেই একাধিক মামলা হয়। গেলো চার মাস আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর মধ্যে নাঈমের সাবেক স্ত্রী আরেক ছেলেকে বিয়ে করে।’
ঘটনার বিষয়ে বাড়িওয়ালা পলাশ বলেন, চার মাস আগে নাঈম তার মা-বাবা ও বোনকে নিয়ে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। ফ্লাটে ওঠার পর থেকেই নাঈমকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হতো। বিষয়টি আমার স্ত্রীও খেয়াল করেন। পরে জানতে পারি, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে নাঈমের সঙ্গে তার স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বুধবার সকালে ওই ফ্ল্যাট থেকে চিৎকার শোনার পর পুরো ঘটনাটি জানতে পাই। এরপর বিষয়টি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে জানাই। সেখান থেকে কাউনিয়া থানা পুলিশকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সরোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশুকে গলা কেটে হত্যার পর বাবা নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মেয়েকে নিজের কাছেই রাখেন নাঈম।
স্বজনদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, বুধবার সকালে রোজাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার মায়ের আসার কথা ছিল। বিষয়টি মানতে পারেনি নাঈম। সেখান থেকেই হয়তো সে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে পারে। তবে বিষয়টি আরও গভীর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।


Side banner
Link copied!