• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বহীনতায় বাড়ছে শ্রমিকের মৃত্যু


FavIcon
মীর মোঃ আমান মিয়া লুমান, ছাতক(সুনামগঞ্জ):
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম
ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বহীনতায় বাড়ছে শ্রমিকের মৃত্যু

সুনামগঞ্জের ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)) এর  বিক্রয় বিতরন বিভাগ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায়  একের পর এক বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিকরাদের মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ৮ মে বিদ্যুৎ অফিসের কাজে সূফিনগর এলাকায় বিদ্যুতের খুটিতে ১১কেভি লাইনের কাজ করতে গিয়ে একই খুটিতে থাকা ৩৩ কেভি লাইনে শর্ট খেয়ে খুটিতে আটকে যায় বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিক মুস্তাকিম আহমদ(২২)। সে বর্তমানে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক, পুরো শরির ঝলসে গেছে। সে একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। মোস্তাকিম খুটিতে কাজ করার আগে ১১ কেভি লাইন অফ করলেও ৩৩কেভি লাইন অফ করে নি অফিস কতৃপক্ষ। এভাবে একের পর এক বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিক দূর্ঘটনার শিকার হওয়ার বিষয়টি বিদ্যুৎ অফিসে দায়িত্বহীনতাকে দায়ি করছেন সাধারন মানুষ। বিদ্যুৎ অফিসের দায়িত্বহীনতার কারণে মুস্তাকিম মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। মুস্তাকিম ছাড়াও এ অফিসের আরোও বেশ কয়েকজন বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিকরা অফিসের দায়িত্বহীনতার কারণে মারা গেছেন। এনিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় প্রত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরও কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি অফিস কতৃপক্ষকে।  অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকায় অফিসের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি সহজে ধামাচাপা দেয়া যায়। মুস্তাকিনের বিষয়টিও ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সিন্ডিকেটরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানাগেছে।

জানাযায়, ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর বিক্রয় বিতরন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন মোস্তাকিম আহমদ। তিনি কালারুকা ইউপির রায়সন্তোষপুর গ্রামের ক্বারী শাহ আব্দুল কাদিরের ছেলে ও মুক্তিযোদ্ধা শাহ আব্দুর রহমানের নাতী। গত ৮ই মে কালারুকা ইউপির সুফিনগর এলাকায় বিদ্যুতের খুটিতে কাজ করতে যান মোস্তাকিম। বিদ্যুতের খুটিতে উঠার আগে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে খুটিতে কাজ করছিলো। কাজ করা অবস্থায় হঠাৎ বৈদ্যুতিক শর্ট খেয়ে সে খুটিতেই আটকে যায়। পরে আবার লাইনটি তাৎক্ষনিক বন্ধ করে খুটি থেকে মুমুর্ষ অবস্থা উদ্ধার করে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তাকে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লাইন বন্ধ থাকা সত্ত্বে কিভাবে সে বৈদ্যুতিক শর্ট খেল? মোস্তাকিম যে খুটিতে কাজ করছিলও সেই খুটির ১১কেভি লাইনে সাট ডাউন নেয়া হলেও ৩৩ কেভি লাইন সাট ডাউন (বন্ধ) করেননি অফিস কর্তৃপক্ষ। তাই সে বৈদ্যুতিক শর্ট খেয়ে ঝলছে গেছে।

এখানে এর আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, মুস্তাকিম ছাড়াও ছাতক উপজেলার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর বিক্রয় ও বিতরন বিভাগের অবহেলার কারণে পৌর শহরের বাগবাড়ি গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে মোহন মিয়া। উপজেলার নোয়ারাই ইউপির বেতুরা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে ফারুক মিয়া। পৌর শহরের বাগবাড়ী- ইটখলা এলাকার মৃত মজর আলীর ছেলে শামীম আহমদ। ইসলামপুর ইউপির বাহাদুরপুর-গনেশপুর গ্রামের আমিন উদ্দিনের ছেলে শাহ জামাল। বিদ্যুৎ শ্রমিক শাহজাহান মিয়া সহ আরোও অনেকেই প্রায় একই ভূলের কারণে মারা গেছেন। একের পর এক বেসরকারী বিদ্যুৎ শ্রমিক দূর্ঘটনার শিকার হওয়ায় বিষয়টিকে অত্র এলাকার সচেতন মহল কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতাকে দায়ি করছেন। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে মুস্তাকিম মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

আরও জানাযায়, গত কয়েক বছর ধরে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এ বিদ্যুৎ অফিস। অনবরত চলছে অনিয়ম, মিটার চুরি, ঘুষসহ নানান দুর্নীতি। অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকায় অফিসের অনিয়ম, মিটার চুরি, ঘুষসহ নানান দুর্নীতি সহজে ধামাচাপা দেয়া যায়। মুস্তাকিনের বিষয়টিও ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন অসদুপায় অবলম্বন করছে সিন্ডিকেট। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট অনিয়ম, মিটার চুরি, ঘুষসহ নানান দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকার বিউবো কর্মচারী পরিদপ্তরের উপপরিচালক রেহানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই অফিসের তিন কর্মচারীকে বদলি করা হলেও সিন্ডিকেট এখনো বহাল তবিয়তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এব্যাপারে ছাতক বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সুমন চৌধুরী বলেন, আমি এসব বিষয়ে জানিনা এবং আমি কোন সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত না। লাইনম্যান সাট ডাউন নিয়েছে ১১ কেভির: ৩৩ কেভির নিয়েছে কি-না আমার জানা নেই। আপনি কি এ দায় এড়াতে পারেন তার কাছে জানতে চাইলে তিনি আবারও বলেন আমার উর্ধতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া আমি আর কিছু বলতে পারবো না। আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এবিষয়ে আফিসে এসে জেনে নিন।

এব্যপারে ছাতক বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ বলেন, মুস্তাকিম আমাদের কোন কাজে পোলে উঠে নাই। সে আমাদের কিছু না জানিয়ে তার ব্যাক্তিগত কাজে পোলে উঠেছিল। এবলে তিনি মিটিং এ আছেন বলে তড়িঘড়ি করে মোবাইল ফোন কেটে দেয়।


Side banner
Link copied!