ভোলায় সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫/৭/২১ তারিখে যোগদান করেন ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃএকে এম শফিকুজ্জামান,যোগদানের পর থেকেই চলছে ঘুষ বানিজ্য। ঘুষ না দিলে কোনো কাজই হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আবু জাফর সহ ভোলার একাদিক ঔষধ ব্যবসায়ীররা জানায় বর্তমান সিভিল সার্জন ডাঃএকে এম শফিকুজ্জামান ভোলায় যোগদানের পর থেকেই টাকা ছাড়া পাচ্ছেনা ড্রাগ লাইসেন্স।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, ভোলার ঔষধ প্রশাসনের সাবেক ড্রাগ সুপার ইফ্রাহীম ইকবাল চৌধুরী প্রতি লাইসেন্স করতে গিয়ে সিভিল সার্জনকে ৩০০০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে, কারন জানতে চাইলে বলেন ড্রাগ লাইসেন্স করতে জেলা কমিটির সদস্যর অনুমোদন নিয়ে লাইসেন্স করতে হয়,কিন্তু বাকি কারো কোন খরচ দিতে না হলেও সিভিল সার্জন খরচের টাকা ছাড়া কোন ফাইলে স্বাক্ষর করে না। তাই লাইসেন্স করতে হলে তাকে খরচ দিতে বাধ্য কারণ তার স্বাক্ষর ছাড়া ফাইল অসম্পূর্ণ আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে টাকা আদায় করে সিভিল সার্জন।
এব্যপারে ভোলার ঔষধ প্রশাসন অফিস সহকারী মোঃহাসান জানায়, সিভিল সার্জনকে প্রতি লাইসেন্সে ৩০০০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে এর কম হলে ফাইল আনফিট করে দিতো।
মোঃনাজমুল হাসান,সহকারী পরিচালক, বর্তমান ভোলার ঔষধ প্রশাসন জানান, সিভিল সার্জন জেলা ড্রাগ লাইসেন্স কমিটির সদস্য, কিন্তু সিভিল সার্জন ছাড়া আরো সদস্য আছে কাউকে লাইসেন্স বাবদ খরচ দিতে হয়না।কমিটির একমাত্র সদস্য সিভিল সার্জন খরচ ছাড়া ফাইলে স্বাক্ষর করেনা। তবে আমার চাকরির জীবনে কোথাও এমনটা দেখিনি, যে টাকা ছাড়া ড্রাগ লাইসেন্সের কাগজে সিভিল সার্জন স্বাক্ষর করে না।
বর্তমানে সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে ডোপ টেষ্ট করতে হয়। সদর হাসপাতালে সরকারি ভাবে, যে মূল্য নির্ধারন করে দিয়েছে সেই খরচে সাধারণ মানুষ রিপোর্ট পায়না। কারন ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃএকে এম শফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রতি রিপোর্টে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
ভোলার সিভিল সার্জন অফিসের একাধিক স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান এই সিভিল সার্জন ভোলায় যোগদানের পর থেকেই ভোলার স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশা। প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক থেকে যে ভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এজন্যই ভোলার স্বাস্থ্য সেবা হুমকির মুখে।সদর হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী যদি তার এই দূর্নীতির প্রতিবাদের চেষ্টা করে তাকে হয়রানি মূলক ভোলা সদর থেকে অন্য উপজেলায় চরফ্যাশন ও মনপুরা পাঠিয়ে দেয়।তাই ভয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহসও কেউ পাচ্ছে না।
ভোলা সিভিল সার্জন অফিসের স্টাফরা আরো জানায় এই সিভিল সার্জনকে টাকা দিলে অবৈধ জিনিসও বৈধ হয়ে যায়, যেমন ভোলায় অনেক প্রতিষ্ঠান আছে তাকে মাশোহারা দিয়ে চলে, বৈধ কোন কাগজপত্র নেই, টাকা দিলে সেটাও বৈধ হয়ে যায়। যেমন ডিজিটাল এক্সরে টিনের ঘড়ে করলেও কোন অবৈধ না টাকা পেলে সেটাও বৈধ। ভোলায় নিউ দৌলতখান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টিনের ঘরে চলে ডিজিটাল এক্সরে।
বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একাধিক মালিকরা জানায়, সম্প্রতি সরকার বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর তালিকা করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই লাইসেন্স করতে মরিয়া হয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ছুটছেন সিভিল সার্জন অফিসে। আর এই ঘোষণাকে কাজে লাগিয়ে সুযোগ সন্ধানী সিভিল সার্জন নেমেছেন ঘুষ বাণিজ্যে, লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।নতুন লাইসেন্স জন্য গেলে অফিস খরচ, সিভিল সার্জনের পরিদর্শন খরচ ধরে তিনি দাবি করছেন মোটা অঙ্কের টাকা । আবার অনেকেই তার চাহিদা মেটাতে না পাড়ায় সরকারের নির্ধারিত সময়ে তাদের প্রতিবেদনের রির্পোট যাচ্ছে না ডিজি হেল্থে।
ভোলা জেলা প্রাইভেট হাসপাতাল,ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের একাধিক ভুক্তভোগিরা জানান,আমাদের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ডিজি হেল্থ ঢাকায় আবেদন করি,সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোলার সিভিল সার্জন কে চিঠি দিয়েছেন ডিজি হেল্থ তাতে উল্লেখ করেন চিঠি পাওয়ার ১০ কর্মদিবসের মধ্য সিভিল সার্জন প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন পাঠাতে।কিছু প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করলেও সেই সমস্ত ক্লিনিকের প্রতিবেদন রিপোর্ট ডিজি হেল্থ পাঠানো হয়নি দুই থেকে তিন মাসেও। তারা আরো জানান,ভোলার সিভিল সার্জন একে এম শফিকুজ্জামান ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতি তাকে একটা নিদিষ্ট টাকা দিতে হয়। তার চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলে দীর্ঘদিন ঘুরেও প্রতিবেদনের রিপোর্ট সময় মতো ছাড়ছে না। প্রতিবেদনের রিপোর্ট না ছাড়ার কারনে প্রতি অর্থ বছেরর লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করছে অনেকে।
ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক লাইসেন্স ও অডিট কমিটির অন্যদের কাছে জানতে চাইলে জানান,সব ঠিক থাকলে আমরা স্বাক্ষর ও তারিখ দিয়ে শুপারিশ লিখে দেই, কিন্তু আমাদের স্বাক্ষর ও তারিখ দেওয়ার পরও সিভিল সার্জন কিজন্য দুই তিন মাস ফাইল ছাড়ছে না তা আমাদের জানার বাহিরে।
উল্লেখ্য যে ২৫/০৭/২৩ তারিখে ডিজি হেল্থে আবেদনের পেক্ষিতে। ভোলা স্কয়ার মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার এর কাগজ সিভিল সার্জন অফিসে চাওয়া হয়, ২৮/৮/২৩ তারিখে কাগজ জমা দেয়া হয় সিভিল সার্জন অফিসে। ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের জেলা লাইসেন্স কমিটির আরো দুই সদস্য, সদর উপজেলা টিএস ডাঃ মনিরুজ্জামান রাব্বি ও ডাঃ ফাইজুল হক সব ঠিক থাকার কারনে ৩ সেপ্টেম্বর শাক্ষর সিল ও তারিখ দিয়ে সুপারিশ করে দিলেও সিভিল সার্জনের চাহিদা মেটাতে না পারায় তার স্বাক্ষর না দিয়ে ফাইল আটকিয়ে রাখে আরো দের মাস, পরে তার চাহিদা মেটাতে পারায় কাগজ ছাড়ে দেড় মাস পর।
ক্লিনিক গুলোর মালিক পক্ষ আরও জানান, সরকার অবৈধ ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ঘোষণা দেওয়ায় আমাদের মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে।সময় মতো লাইসেন্স না পাওয়া গেলে আরো সমস্যায় পড়তে হবে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভোলা জেলায় বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১১০টি।কিন্তু সরকার ঘোষিত ভ্রাম্যমাণ
ক্লিনিক গুলোর মালিক পক্ষ আরও জানান, সরকার অবৈধ ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ঘোষণা দেওয়ায় আমাদের মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে।সময় মতো লাইসেন্স না পাওয়া গেলে আরো সমস্যায় পড়তে হবে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভোলা জেলায় বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১১০টি।কিন্তু সরকার ঘোষিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের ভয়ে লাইসেন্স গ্রহণের আবেদন করছে বেশিরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই সরকারি নিয়মনীতি পুরোপুরি অনুস্বরণ না করায় অনুমোদন পাওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান। তাই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাওয়ার সংকট উপায় খুঁজছে। এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে সিভিল সার্জন।
ভোলার সচেতন মহল জানায় এই সিভিল সার্জন যোগদানের পর থেকেই ভোলায় স্বাস্থ্য সেবায় অনেক দুর্নীতি করছে সিভিল সার্জন ডাঃশফিকুজ্জামান, তবে ভোলার সচেতন মহলের দাবি ভোলা থেকে এই সিভিল সার্জন বদলি না হলে কোনদিন ভোলার স্বাস্থ্য সেবার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এ বিষয়ে ভোলার সিভিল সার্জন ডা.একে এম শফিকুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে মুঠোফোনে একাধিক বার ফোনে করেও তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি। ভুক্তভোগীদের দাবী এই কর্মকর্তার দুর্নীতি রোধে দুদকের সু-হস্তক্ষেপ জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :