• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

কাঁঠালিয়া ভুমি অফিস দুর্নীতি আঁকড়া, নেপথ্যে পেশকার শুভো


FavIcon
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৩, ০১:৩৮ পিএম
কাঁঠালিয়া ভুমি অফিস দুর্নীতি আঁকড়া, নেপথ্যে পেশকার শুভো
ছবি - সংগৃহীত

কাঁঠালিয়া উপজেলা সদর ৪নং ইউনিয়ন ভুমি অফিস ভূমিদস্যুদের কবলে পড়েছে। এখানে প্রতিনিয়ত ভূমিমালিকেরা হয়রানি”ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন. সেই সাথে টাকা হলে এমন কোনো কাজ নেই যা এ অফিসে করানো যায় না। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় অসৎ কর্মকর্তাদের সাথে ভূমিদসুদের যোগসাজশে এসব কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে”
ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না কোথাও, সেখানে পা বাড়ালে জমির মালিকদের জন্য পদে পদে অপেক্ষা করে হয়রানি.এ জন্য অনেকে ভূমি অফিস এড়িয়ে চলতে চান.জরুরি প্রয়োজনে দালালেরাই হয়ে ওঠেন সমাধান।
গ্রাম এলাকায় জমির কাগজসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানে প্রথমেই যেতে হয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে. পরের ধাপে সেবা দেয় উপজেলা ভূমি অফিস। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন এসব অফিসের দেওয়া সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে—ভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত, খতিয়ানের ভুল সংশোধন, নামজারি ও জমাভাগ, ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণীর আপত্তি-নিষ্পত্তি, দেওয়ানি আদালতের রায় বা আদেশমূলে রেকর্ড সংশোধন, ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন নিষ্পত্তি, জমা একত্রকরণ ও বিবিধ কেসের আদেশের নকল বা সার্টিফায়েড কপি প্রদান ইত্যাদি।
সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে দালালেরা যে টাকা নেন, তা ভাগ-বাঁটোয়ারাও হয় নানা ধাপে। ভূমি অফিসে তৎপর এক দালাল জানান, ঘুষের টাকার ৫০ শতাংশই পান সহকারী (ভূমি কমর্কতা , ৩০ শতাংশ পেশকার শুভো পায়” আর ২০ শতাংশ পান দালাল’
এ প্রসঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘আমরা চাই অফিসগুলো দালালমুক্ত হোক। ভূমি ভবনের নিচে পরীক্ষামূলক কাস্টমার কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছে। সেখানে বিনা মূল্যে সব কাজ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৬১২২ নম্বরে ভূমি সেবার একটা কল সেন্টার রয়েছে, সেখানে সমস্যার কথা জানাতে পারেন। এই সিস্টেমগুলো জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেব।ভূমি অফিসগুলোয় সেবা পেতে কী কী ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় তা জানতে সরেজমিনে কাঠালিয়া উপজেলা সদর ৪নং ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘুরে দেখেছেন. ভূমি অফিসেই ঘুষ লেনদেন, চরম ভোগান্তি ও দালালের দৌরাত্ম্য চোখে পড়েছে তাঁদের।
প্রতিনিধি জানান, ঘুষ ছাড়া জমির নামজারি হয় না উপজেলা ভূমি অফিসে। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও টাকা ছাড়া ফাইল সহকারী কমিশনারের (ভূমি) টেবিলে পৌঁছায় না। কাগজপত্রে গরমিল থাকলে গুনতে হয় কয়েকগুণ বেশি টাকা।
এই অফিসে সেবা নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, একটি জমি কিনে নামজারি করতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অনলাইনে আবেদন করেছিলাম। সরকারি ফি ১ হাজার ২৫০ টাকা হলেও ভূমি পেশকার শুভোকে দিতে হয়েছে বাড়তি ৩ হাজার টাকা। নামজারির আবেদন নিষ্পত্তিতে ফাইলপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। নামজারির আবেদনের সঙ্গে তাঁদের দিতে হয় বাড়তি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পেশকার শুভোকে”
ঘুষ নেওয়ার জন্য ভয়াবহ এক কাজ করেছেন একটি ভূমি অফিসের দালাল। ভুক্তভোগীর জাকির হোসেন এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের খতিয়ানে নাম ছিল, সাটিফিকেট পেশকার আসাদুজ্জামান শুভো – পৃষ্ঠা ছিঁড়ে টাকার বিনিময়ে অন্য নাম ঢুকাইছে। অথচ অনলাইনে সঠিক তথ্য রয়েছে।
খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমির খাজনা দিতে গিয়েছিলেন তাঁর কাছ থেকে নিয়েছেন ১৭ হাজার টাকা, কিন্তু রসিদ দিয়েছেন মাত্র ২ হাজার ২০০ টাকার। একই অফিসে জমির খাজনা বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন ভূমির মালিক আবুল হোসেন। কিন্তু তাঁকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২০ টাকার রসিদ। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ভূমি তশিলদার জাকির হোসেন বলেন, ‘কার কাছে কত টাকা নিয়েছি। সেটা আপনাদের জানার দরকার নাই। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমির খাজনা দিতে চাইলেও তাঁর কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে ৮ হাজার টাকায় তিনি দাখিলা কেটেছেন আর দাখিলায় খাজনা জমা দেখানো হয়েছে মাত্র ২২০ টাকা। সদরের ভুক্তভোগী হারুনুর রসিদ বলেন, ‘আমার ভিটেবাড়ির নাম খারিজের জন্য প্রায় আড়াই মাস আগে ১ হাজার ১৫০ টাকার ফিসহ সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। সরকারি ফি কত টাকা জানতে চাইলে তাঁরা সঠিক তথ্য দেন না। ফলে বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। তারপরও কাগজ পাচ্ছি না।
ডিজিটাল সেবাও ঝুলে থাকে টাকার জন্য
ভূমি অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অনলাইনে সেবা চালু করেছে সরকার। এর মধ্যে জমির নামজারি, খাজনা ও মিসকেস সেবা অন্যতম। ভুক্তভোগীরা বলছেন, অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনলাইনে আবেদনের পর আবার মূল কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। তখন টাকা না দিলে অনলাইনে ঝুলে থাকে ফাইল।

জমিতে কেউ নতুন মালিক হলে তাঁর নাম খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারি বলে। অনলাইনে নামজারির জন্য প্রথমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে। তারপর ৭০ টাকা ফিসহ নামজারির আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। অনলাইনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভূমি অফিস তদন্ত করে উপজেলা ভূমি অফিসে নাম প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু এই নাম প্রস্তাব পাঠানোর জন্য ভূমি সাটিফিকেট পেশকার আসাদুজ্জামান শুভো জমি অনুপাতে ১ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি টাকা নেন।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অনিক চন্দ্র বলেন, নামজারি জন্য অনলাইনে আবেদন করে কাগজসহ দিয়েছিলাম। কর্মকর্তা কাগজে ভুল আছে জানিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাঁর কথা অনুয়ায়ী অনলাইনের কপিসহ ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু তহশিলদার দিনের পর দিন ঘোরাচ্ছে। মোঃ মনিরুজ্জামান মন্জু পদবি অফিস সহায়ক হলেও কাজ তার কমর্কর্তার, ঘুষ নেওয়া মূল কাজ তার। এ সকল দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি রোধে দুদকের সু-হস্তক্ষেপ জরুরী ।
 


Side banner

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর

Link copied!